রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৬:২০ পূর্বাহ্ন

গোবিন্দগঞ্জ করতোয়ার পাড়ে মাটি খেকোদের থাবা

গোবিন্দগঞ্জ করতোয়ার পাড়ে মাটি খেকোদের থাবা

গোবিন্দগঞ্জ প্রতিনিধি: গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে করতোয়া নদীর মাটি কেটে নিচ্ছে দুর্বৃত্তরা। এছাড়া নদীতে জেগে ওঠা চরের বিভিন্ন স্থান থেকে মাটি কেটে একটি চক্র ট্রলিতে করে বিক্রি করছে। অবৈধভাবে মাটি কেটে নেওয়ার অপরাধে ট্রলি আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কারাদণ্ড দেওয়া হলেও মাটি কাটা বন্ধ হচ্ছে না। সুযোগ বুঝে রাতেও মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে চক্রটি।
জানা গেছে, গোবিন্দগঞ্জের করতোয়া নদী তীরবর্তী প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নির্বিচারে নদীর চর কেটে মাটি তুলে বিক্রি করছে একটি সিন্ডিকেট। নদীর দুই পাড়ই এখন মাটি খেকোদের দখলে। উপজেলার সাপমারা ইউনিয়নের চক রহিমাপুর, সাহেবগঞ্জ মেরী ও ফকিরগঞ্জ নরেঙ্গবাদ, কাটাবাড়ী ইউনিয়নের পলুপাড়া, ফুলহার, রাখালবুরুজ ইউনিয়নের ধর্মপুর বড়দহ ব্রিজ এলাকা ও মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকাসহ করতোয়া নদীর চর কেটে মাটি বিক্রি করে আসছে মাটি খেকোরা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, অবাধে মাটি কেটে বিক্রি করলেও তা যেন দেখার কেউ নেই। মাঝেমধ্যে দু’একটি লোক দেখানো অভিযান চালিয়ে থাকে প্রশাসন। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয় না। দিনরাত ভেকু দিয়ে মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে করে নদীর বাঁধ হুমকির পাশাপাশি নদীর চরে ফসলি জমিও দিন দিন কমে যাচ্ছে। এছাড়া বড় বড় ডাম্পট্রাক ও ট্রাক্টরে মাটি নেওয়ার কারণে নষ্ট হচ্ছে নদী পাড়ের সড়ক।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসন মাঝে মাঝে অভিযান চালালেও স্থানীয় ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে চলছে মাটি কাটার ধুম। বাধা দিলে হামলা ও নাজেহাল করা হয় সাধারণ মানুষকে। মাঝে মাঝে প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করলে সাময়িক সময়ের জন্য মাটি কাটা বন্ধ থাকে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে এসব স্থানে শ্রমিকদের অর্থদণ্ড দেওয়া হলেও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে মূল হোতারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, ট্রাক্টর ও ডাম্পট্রাক দিয়ে মাটি পরিবহন করায় নদী তীরবর্তী এলাকার সড়কের অবস্থা বেহাল। পাকা রাস্তাগুলো খানাখন্দে ভরে গেছে। ওই এলাকার গাছপালা, বাড়িঘর ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জমেছে ধুলোর স্তর। শিক্ষার্থীরা চরম আতঙ্কে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করছে। নদীর চর এলাকায় এস্কেভেটর দিয়ে গভীর গর্ত করে মাটি কাটার ফলে নদীর গতিপ্রকৃতি পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি চরম ঝুঁকির মুখে পড়েছে প্রতিরক্ষা বাঁধ।
আবার নদীর বাঁধের ওপর দিয়ে এসব মাটি পরিবহনে অবৈধ ট্রাক্টর ও ডাম্পট্রাক ব্যবহার করায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাঁধের সড়ক। অপরিকল্পিতভাবে অসংখ্য স্থানে বাঁধ কেটে বানানো হয়েছে গাড়ি ওঠানামার রাস্তা। অপরিকল্পিতভাবে নদীর বাঁধ দিয়ে মাটি পরিবহন করায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নদীর বাঁধ।
‘অজ্ঞাত কারণে প্রশাসন নীরব রয়েছে। প্রশাসনের তদারকির অভাবে দীর্ঘদিন ধরে মাটি ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। গ্রামীণ সড়কে মাটি পরিবহনে রাস্তা-ঘাট দেবে গিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’
এদিকে ভেকু দিয়ে গভীর গর্ত করে মাটি কাটায় পরিত্যক্ত নদীর চর ও চরাঞ্চলের ফসলি জমি ডোবায় পরিণত হচ্ছে। শিক্ষার্থী মোঃ ইব্রাহিম প্রিন্স বলেন, প্রতিনিয়ত ট্রাক্টর মাটি নিয়ে চলাচল করে। স্কুলের যাওয়ার সময় অনেক ভয় লাগে। কখন যে ধাক্কা দিয়ে যায়।
অভিভাবক সুজা মিয়া বলেন, সন্তানদের একা একা স্কুলে পাঠিয়ে আতঙ্কে থাকতে হয়। ট্রাক্টর দিয়ে মাটি নিয়ে যাওয়ায় রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে গেছে। যেকোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
উপজেলার সাপমারা ইউনিয়নের চক রহিমাপুর এলাকার মাটি ব্যবসায়ী মোঃ এনামুল বলেন, প্রশাসন তো কখনোই এদিকে আসে না। তবে আপনারা যখন প্রশাসনকে ফোন দিয়ে বিরক্ত করেন তখন তারা বাধ্য হয়ে অভিযান পরিচালনা করে থাকে।
ফকিরগঞ্জ নরেঙ্গবাদ এলাকার আরেক মাটি ব্যবসায়ী মাহবুর রহমান বলেন, নদীর মধ্যে তাদের জমি ছিল। সেখান থেকে তারা প্রতি বছর মাটি কেটে বিক্রি করে থাকে। অন্যান্য এলাকায় মাটি কাটা হলেও তো আপনাদের (সাংবাদিক) নজরে পড়ে না।
অভিযোগ উঠেছে, অনৈতিক সুবিধা নিয়ে খোদ ইউএনও মাটি ব্যবসায়ীদের পরামর্শ দিয়ে থাকেন তার কাছে পুকুর বা জলাশয় খননের আবেদন করার। কিন্তু ওই সুযোগে পুকুর খননের মাটিসহ করতোয়া নদীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ইটভাটাসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণে মাটি বিক্রি করে আসছে মাটি দস্যুরা।
এ বিষয়ে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা ইয়াসমিন সুলতানা বলেন, সাংবাদিকের কাজ রিপোর্ট সংগ্রহ করে রিপোর্ট (নিউজ) করা। কেউ মাটি কেটে বিক্রি করে থাকলে নিউজ করেন। আর আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করছি। আপনারা আপনাদের দায়িত্ব পালন করেন।

নিউজটি শেয়ান করুন

© All Rights Reserved © 2019
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com